সিএসইতে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার

সিএসইতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে। এ ছাড়া কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ন্যূনতম ৩ (৪ স্কেলে) পয়েন্ট নিয়ে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ভর্তি বিধিমালা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কৃতকার্য শিক্ষার্থীরাই কেবল মেধাতালিকা অনুসারে ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন।

যেখানে ভর্তি হওয়া যায়

বর্তমান যুগে কম্পিউটার সায়েন্স একটি চাহিদাসম্পন্ন বিষয়, যা নিয়ে শুধু বাংলাদেশে নয়, বরং পৃথিবীর যেকোনো দেশের মোটামুটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশের সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বুয়েট, ডুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট—এসব প্রতিষ্ঠানকে কম-বেশি সিএসই স্নাতকের জন্য প্রথম পছন্দ হিসেবে ধরা হয়। এ ছাড়া সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শাবিপ্রবি, মাভাবিপ্রবি, হাবিপ্রবি, নোবিপ্রবি, যবিপ্রবি, পাবিপ্রবি, বশেমুরবিপ্রবিসহ সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। দেশের স্বনামধন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিশেষায়িত কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এসইসি, এমইসিসহ অন্যান্য কলেজে এই বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, এআইইউবি, ইউআইইউ, ডিআইইউ, গ্রিন ইউনিভার্সিটিসহ ইউজিসি অনুমোদিত মোটামুটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে ভর্তির সুযোগ রয়েছে।

যেসব কোর্স পড়ানো হয়

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল প্রোগ্রামে সবচেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো প্রোগ্রামিং। একজন দক্ষ আইটি প্রযুক্তিবিদ হয়ে বাস্তবিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে অর্জন করতে হবে গভীর প্রোগ্রামিং স্কিল। এই লক্ষ্যে কারিকুলামে রয়েছে স্ট্রাকচার অ্যান্ড অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিংসহ অ্যানালিটিক্যাল প্রোগ্রামিংয়ের বিভিন্ন বিষয়। প্রোগ্রামিংয়ের লজিকসমূহ বিকশিত করতে রয়েছে ডেটা স্ট্রাকচার, অ্যালগরিদম ডিজাইন অ্যান্ড অ্যানালাইসিস, ডিস্ক্রিট ম্যাথসহ অন্যান্য বিষয়। এ ছাড়া হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্কিং বিষয়ে শিক্ষার্থীকে পারদর্শী করে তুলতে কারিকুলামে রয়েছে একাধিক বিষয়। শিক্ষার্থীদের অ্যাডভান্সড প্রযুক্তির সঙ্গে আপডেট রাখতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, নিউরাল নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত সাবজেক্টও পড়ানো হয়। পাশাপাশি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি বিষয়সমূহ যেমন গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও মানবিকের কিছু বিষয়কেও জোর দেওয়া হয়।

কর্মসংস্থানের সুযোগ কেমন

সিএসই থেকে পাস করে বের হলেই কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট—প্রায় সব সেক্টরে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের আইটি সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোতে প্রোগ্রামার, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন আইটি পদে ক্যারিয়ার গড়ে প্রযুক্তি খাতকে আরও উন্নত করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। সিএসইতে পড়াশোনা করে দেশের বাইরে গুগল, মেটা, আমাজন, মাইক্রোসফট, সিসকোসহ বিভিন্ন টেক জায়ান্ট কোম্পানিতে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে শিক্ষকতার সুযোগ। শুধু অদম্য প্রচেষ্টা, ইচ্ছাশক্তি আর ধৈর্য—এই তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সিএসইতে পড়লে যে কেউ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা

দেশের প্রতিটি সেক্টর এখন ডিজিটাল ও স্মার্ট সলিউশনের মধ্যে চলে আসছে এবং যা বাস্তবায়ন ও নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন দক্ষ ও প্রযুক্তিপ্রেমী কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ার। শিক্ষার্থীদের কাছে সিএসই জনপ্রিয় বিষয়। কারণ, আগামীর পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করবে মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারিগর কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশলীরা।

পড়াশোনার খরচ

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র খরচে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিনা খরচে আবাসিক সুব্যবস্থা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন থেকে আট লাখ টাকা খরচে এই বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা সম্ভব। এ ছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফলের ভিত্তিতে টিউশন ফির ওপরে বিভিন্ন স্কলারশিপ দেওয়া হয়।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ

স্নাতক শেষ করে দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসইতে স্নাতক করা যায়। পাশাপাশি বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে উচ্চশিক্ষা অর্জনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রতিবছর দেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এই বিষয়ে স্নাতক শেষ করে পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।